৬ রোজার ফজিলত, ৬ রোজা রাখার নিয়ম, ৬ রোজার নিয়ত, ৬ রোজা কখন রাখতে হয়।(6 roja rakhar niyom)

শাওয়াল মাসের চাঁদের ৬টি রোজা রাখা সুন্নাতে মুবারাকা। এই ৬টি রোজার রয়েছে অসংখ্য ফজিলত।  প্রিয়নবী صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা রাখার ব্যপারে নিজ উম্মতদেরকে উৎসাহ প্রদান করেছেন।

৬ রোজা রাখার নিয়ম ও শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত:

(১) হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলে আকরাম صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন, 


"যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখলো, তারপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখলো, তবে সে গুনাহ থেকে এমনিভাবে মুক্ত হয়ে যাবে, যেন সে আজই মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম লাভ করলো।

(আল মজমাউল  যাওয়াইদ, ৩য় খন্ড, ৪২৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫১০২)

(২) হযরত সায়্যিদুনা আবু আইয়ুব رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত, আল্লাহর প্রিয় হাবীব صلى اللهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখলো, এবং এরপর শাওয়াল মাসে আরো ছয়টি রোযা  রাখলো, তবে সে যেনো সারা জীবনই রোযা রাখলো।

(সহীহ মুসলিম, ৫৯২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১১৬৪)


(৩) হযরত সায়্যিদুনা সাওবান رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত, আল্লাহ্ তা'য়ালার রাসূল, রাসূলে মকবুল صلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পর অর্থাৎ শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখল, সে যেন সারা বছর রোযা রাখল। কারণ, যে একটা নেকী করে সে দশটার সাওয়াব পায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৭১৫)

শাওয়াল মাসের ৬ রোজা রাখার রোজা রাখার নিয়ম:

শাওয়াল মাসের ৬ রোজা এক সাথেও এক টানা ৬দিন রাখা যাবে।  অথবা   সম্পূর্ন শাওয়াল মাসের  সাপ্তাহে প্রতি  সোমবার  প্রতি শুক্রবার যাবে।

অথবা বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কিংবা শুক্র শনি রাখা যাবে।

কেননা হাদিসে পাকে সোমবার, শুক্রবার এবং বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কিংবা শুক্রবার ও শনিবার নফল রোজা রাখার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

শাওয়াল মাসের ৬ রোজা কি ঈদের ২য় দিন থেকেই রাখতে হবে?

সাধারণ মানুষের ধারণা শাওয়াল মাসের রোজা ঈদের ২য় দিন থেকেই রাখতে হবে এবং একসাথে রাখতে হবে।  আসলে এমন টা নয়। তবে ২য় দিন থেকে রাখলে অসুবিধা নেই আর এক সাথে ৬ রোজা রাখলেও সমস্যা নেই। আর পোরো শাওয়াল মাসে ভেঙে ভেঙে বা এক রোজা গ্যাফ রেখে রেখে রাখলেও সমস্যা নেই।

শাওয়ালের ৬ রোজার সাথে কি কাযা রোজার নিয়ত করা যাবে?

শাওয়ালের ৬ রোজার মধ্যে একই সাথে কাযা রোজা ও শাওয়ালের নফল রোজার এক সাথে নিয়ত করা যাবেনা বরং যেকোনো এক ধরনের রোজার নিয়তই করতে হবে, হয়তো কাযা রোজার নিয়ত নয়তো শাওয়ালের রোজার নিয়ত অর্থাৎ  যে কোনো এক রকমের রোজার নিয়ত।

শাওয়াল মাসের ৬ রোজা একসাথে রাখা উত্তম নাকি ভেঙে ভেঙে রাখা উত্তম?


শাওয়াল মাসের ৬ রোজা একদিন বাদে একদিন অথবা সাপ্তাহে ২টা করে রোযা রেখে ৬টি পূর্ণ করা উত্তম।

শাওয়াল মাসের ঈদের চাঁদ রাতের ইবাদত:

ইবনে মাজাহ শরীফে বর্ণিত আছে-

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : مَنْ قَامَ لَيْلَتَيْ الْعِيدَيْنِ مُحْتَسِبًا اللَّهِ لَمْ يَمُتْقَ لْبُهُ يَوْمَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ.

হযরত আবু উমামাহ (رَضِىَ اللّٰهُ عَنْهُ)থেকে বর্ণিত আছে যে, হুজুরে আকরাম(صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم) বলেন, যেই ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে নির্ঘুম থেকে নামায আদায় করবে, তার অন্তর মরবে না, যেদিন অন্যান্যদের অন্তর মরে যাবে। 

(সুনানে ইবনে মাজাহ, খন্ড-০৫,  পৃষ্ঠা ৩৪৪, হাদিস নং-১৭৭২;)

শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার পর চার রাকআত নফল নামায:

পবিত্র হাদিসে আছে যে, শাওয়াল মাসের ১ম রাতে যে ব্যক্তি এই নিয়মে চার রাকআত নফল নামায পড়বে, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা ইখলাস পড়বে, সে বান্দার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে। আর জাহান্নামের সাত দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। আর সে বান্দা জান্নাতে তার আবাসস্থল না দেখে মরবে না।

(ফাজাইলুশ শুহুর: মাহে শাওয়াল অধ্যায়;)

শাওয়াল মাসে তাওবার নিয়তে নফল নামায:

শাওয়ালের প্রথম রাতে ইশার নামাযের পর দু'সালামের সাথে চার রাকআত নামায পড়বে। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর তিনবার করে সূরা ইখলাস, এবং তিনবার করে সূরা ফালাক পড়বে। সালামের পর সত্তর বার কালেমায়ে তামজীদ পাঠ করবে। এবং নিজের গুনাহের জন্য তাওবা করবে। আল্লাহ তা'আলা এই নামাযের বরকতে তার

গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তার তাওবা কবুল করবেন। 

(বারো মাসের নফল ইবাদত,পৃষ্ঠা নং-৫৪;)


শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত


চাঁদ রাতের ও ঈদের দিনের আমল:

শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখ অর্থাৎ 

ঈদের দিনের আমল:

ইমাম গাজ্জালী ( رَحْمَةُ اللّٰهِ عَلَيْهِ) তাঁর বিখ্যাত কিতাব মুকাশাফুল কুলুব এর মধ্য উল্লেখ করেন, 

যে ব্যক্তি ঈদের দিনে তিনশত বার

 سُبْحٰنَ اللّٰهِ وَ بِحَمْدِهٖ  "সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি" পাঠ করে এবং সিকল মৃত মুসলমানদের রুহের প্রতি এই সাওয়াব দান করে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মুসলমানের কবরে এক হাজার নূর প্রবেশ করবেন এবং যখন সেই পাঠকারী নিজে মারা যাবে, তখন আল্লাহ তায়ালা তার কবরেও এক হাজার নূর  প্রবেশ করাবেন।

(এই আমলটি উভয় ঈদেই করা যাবে।)

(মুকাশাফাতুল কুলুব, পৃষ্ঠা- ৩০৮;)


শাওয়াল মাসেও নফল রোজা রাখা যায়,হাদিস শরিফে এসেছে, যে ব্যক্তি একদিন নফল রোজা রাখে, আর তাকে যদি পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণ দেয়া হয়, তবুও এর প্রতিদান শেষ হবেনা। এই একটি নফল রোজার সাওয়াব তো কিয়ামতের দিনই দেয়া হবে। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, ৫ম খন্ড,পৃষ্ঠা নং -৩৫৩, হাদিস নং-৬১০৪;)


মানুষ আরো খোঁজে: ৬ রোজার ফজিলত, ৬ রোজা রাখার নিয়ম, ৬ রোজার নিয়ত, ৬ রোজা কখন রাখতে হয়, ৬ রোজা সম্পর্কে হাদিস, ৬ রোজার নিয়ম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ