জুমার দিনের করণীয় আমল ইবাদত ও সুন্নাত সমূহ
জুমার জন্য তাড়াতাড়ি বের হওয়া হজ্ব ওমরার সমান সাওয়াব:
নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত (صلى الله عليه و سلم)ইরশাদ করেন: “নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য প্রত্যেক জুমার দিন একটি হজ্ব ও একটি ওমরা রয়েছে। এই কারণে জুমার নামাযের জন্য তাড়াতাড়ি বের হওয়া তোমাদের জন্য হজ্ব এবং জুমার নামাযের পর আসরের নামাযের জন্য অপেক্ষা করা ওমরা।” (আস্ সুনানুল কুবরা, লিল বায়হাকী, ৩য় খন্ড, ৩৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৫৯৫০)
জুমার দিন দোয়া কবুল হয়:
নবী করীম, রাহমাতুল্লিল আলামীন (صلى الله عليه و سلم) ইরশাদ করেন: “জুমার দিন এমন একটা মূহুর্ত রয়েছে, যদি কোন মুসলমান সেটা পেয়ে আল্লাহ্ তাআলার নিকট কোন কিছু চায় তবে অবশ্যই আল্লাহ্ তাআলা তা দান করবেন। তবে ঐ মূহুর্তটা খুবই সংক্ষিপ্ত।”
(সহীহ মুসলিম, ৪২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৮৫২ )
জুমার দিন দোয়া কবুল হয়:
রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه و سلم)ইরশাদ করেন: “জুমার দিনের দোয়া কবুলের সময়টা আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে অনুসন্ধান করো।” (সুনানে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৮৯)
জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার সময় কোনটি?
মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله عليه) বলেন:জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার সময়ের ব্যাপারে উলামায়ের কিরামগণের ৪০টি অভিমত রয়েছে। তন্মধ্যে ২টি অভিমত সব চাইতে মজবুত। এদের একটি হলো দুই খোৎবার মধ্যবর্তী সময় আর অপরটি হলো সূর্যাস্তের সময় । (মীরআত, ২য় খন্ড, ৩১৯-৩২০ পৃষ্ঠা)
জুমার দিন নখ কাটলে রোগ বিমারী থেকে শিফা (আরোগ্য) লাভ করবে:
হযরত হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান (رحمة الله عليه), তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন তার নখ কাটে, আল্লাহ্ তাআলা তার শরীর থেকে অসুস্থতা দূর করে সুস্থতা প্রবেশ করান।”
(মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বা, ২য় খন্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)
১০ দিন পর্যন্ত বালা-মুসীবত থেকে রক্ষা পাবে:
সদরুশ শরীয়া আল্লামা মাওলানা আমজাদ আলী আযমী(رحمة الله عليه)বলেন; হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটবে আল্লাহ্ তাআলা তাকে দ্বিতীয় জুমা ও পরবর্তী আরো তিনদিন সহ সর্বমোট দশ দিন পর্যন্ত যাবতীয় বালা মুসীবত থেকে রক্ষা করবেন।”
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে; যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটবে, তাঁর নিকট রহমতের আগমন ঘটবে এবং তার গুনাহ দূর ক্ষমা হবে।
(তথ্যসূত্র: বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ২২৬ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৯ম খন্ড, ৬৬৮-৬৬৯ পৃষ্ঠা)
প্রত্যেক জুমার দিন ১ কোটি ৪৪ লক্ষ জাহান্নামীদের মুক্তি:
রাসুলে পাক (صلى الله عليه و سلم) ইরশাদ করেন: “জুমার দিনের রাত- দিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে এমন কোন ঘন্টা নেই, যার মধ্যে প্রতিনিয়ত ৬ লক্ষ দোযখীকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না, যাদের উপর জাহান্নাম ওয়াজীব হয়ে গেছে।” (মুসনাদে আবু ইয়ালা, ৩য় খন্ড, ২৯১, ২৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৪২১, ৩৪৭১)সারা দিনে ১ কোটি ৪৪ লক্ষ জাহান্নামীদের মুক্তি।
জুমার দিনে মারাগেলে কবরের আযাব মাফ:
রাসুলে পাক(صلى الله عليه و سلم) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন কিংবা জুমার রাতে(বৃহস্পতিবার দিন শেষে রাত) মৃত্যুবরণ করবে, সে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাবে এবং কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তার উপর শহীদদের মোহর থাকবে।” (হিলআতুল আউলিয়া, ৩য় খন্ড, ১৮১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৬২৯)
জুমার দিন ২০০ বছরের ইবাদতের সাওয়াব
রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه و سلم) ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে তার গুনাহ ও ভুল সমূহ মুছে দেয়া হয় এবং যখন মসজিদের দিকে চলা শুরু করে, তখন প্রতিটি কদমে ২০টি নেকী লিখা হয়। (আল মুজামুল কবীর, ১৮তম খন্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৯২) অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, প্রত্যেক কদমে ২০ বছরের আমলের সাওয়াব লিখা হয়। আর যখন নামায শেষ করে তখন সে ২০০ বছরের আমলের সাওয়াব পায় । (আল মু'জামুল আওসাত, ২য় খন্ড, ৩১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৩৯৭)
জুমার দিনের ৫টি বিশেষ আমল
হুযুরে পাক(صلى الله عليه و سلم) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি এক দিনে পাঁচটি কাজ সম্পাদন করবে, আল্লাহ্ তাআলা তাকে জান্নাতী হিসাবে লিখে দিবেন: (১) যে ব্যক্তি রোগীকে দেখতে যাবে, (২) জানাযার নামাযে উপস্থিত হবে (৩) রোযা রাখবে, (৪) জুমার নামাযে যাবে এবং (৫) গোলাম আযাদ (মুক্ত) করবে।”
(আল ইহসান বিতরতিবে সহীহ ইবনে হিব্বান, ৪র্থ খন্ড, ১৯১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৭৬০ )
জুমার দিন যে আমলে জান্নাত ওয়াজীব হয়ে যাবে:
রাসুলে পাক (صلى الله عليه و سلم) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার নামায আদায় করে, ঐ দিন রোযা রাখে, কোন অসুস্থ ব্যক্তির সমবেদনা জ্ঞাপন করে, কোন জানাযায় উপস্থিত হয়, কারো বিয়েতে অংশগ্রহণ করে, তবে ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজীব হয়ে গেলো ।”
(আল মুজামুল কবীর, ৮ম খন্ড, ৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৭৪৮৪)
জুমার দিনের সুন্নত সমূহ:
১)নখ কাটা।
২)গোফ/মোচ ছোট করা।
৩)মিসওয়াক করা।
৪)গোসল করা।
৫)সাদা জামা বা উত্তর পোষাক পরা।
৬)তেল এবং সুগন্ধি আতর লাগানো।
জুমার নামাযের গুরুত্ব
৭)জুমার দিন একেবারে শুরু ওয়াক্তে মসজিদে যাওয়া।
৮)প্রথম কাতারে ইমামের কাছাকাছি বসা।
৯)নিরবে খোতবা শুনা।
১০)জুমার প্রথম আযানের সাথে সাথেই কাজ-কর্ম ছেড়ে দেয়া।
১১)পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়া।দূর হলে কিছু সম্ভব হাটা।এতে প্রতি কদমে ২০বছরের নেকি রয়েছে।
১২)অধিক পরিমাণ দুরুদ শরিফ পড়া।কমপক্ষে ২০০বার এতে ২০০বছরের গুনাহ মাফ হবে।
১৩)সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করা।এতে ৩হাজার হরফ আছে, ৩হাজার গুনাহ ক্ষমা হবে।(ইত্তেহাফুস সাদাত,১৪তম খন্ড,২৭২ পৃষ্ঠা)
১৪)মা বাবা ময়-মুরুব্বিদের কবর জিয়ারত করা।
১৫)দুই খুতবার মাঝে সংক্ষিপ্ত সময়ে মনে মনে দুয়া করা।
১৬)জুমার দিন আসর থেকে মাগরীব দোয়া করা।
১৭)জুমার দিন দান সদকা করা।এতে ৭০গুন সাওয়াব রয়েছে।
১৮)অধিক পরিমান জিকির করা।ইস্তেগফার করে। ৩বার ইস্তেগফারের ফযিলত ৫০ বছরের গুনাহ মাফ।
১৯)সকল উম্মতে মুহাম্মাদির গুনাহ ক্ষমার দুয়া করা,এতে সকল উম্মতের সংখ্যা সমান সাওয়াব পাওয়া যাবে।
২০)আত্মীয় সজনের বাড়িতে যাওয়া,রুগীদের দেখতে যাওয়া,নিজ ঘর ও প্রতিবেশির জন্য কিছু ভালো খাবার ব্যবস্থা করা।
২১)বৃহস্পতিবার সাথে জুমার দিন অথবা সাথে শনিবার মিলেয়ে রোজা রাখলে ১০হাজার বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যায়।(ফতোয়ায়ে রজবিয়া, খন্ড-১০,পৃষ্ঠা -৬৫৩;)
২২)জানাজায় শরিক হওয়া।এতে জান্নাতের সু-সংবাদ রয়েছে।
২৩)জুমার দিন সুরা হা-মীম দুখান তিলাওয়াত করা। জান্নাতে আলিশান মহল দেয়া হবে এবং তাকে ক্ষমা করা হবে।
২৪)সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা।এতে আসমান পর্যন্ত নুর পাবে।
২৫)মসজিদে দুই ব্যক্তির মাজখানে তাদের শরিয়ে না বসে, যেখানে যায়গা পাওয়া যায় সেখানে বসা।
২৬)নারীদের জন্য মসজিদে যাওয়ার গুলো ব্যতিত এখানে ঘরে যা আমল করা যায় সেগুলো সহ পুরুষের জামাতের শেষ হলে মহিলারা নামায পড়বে(অর্থাৎ একটু দেরী করে)।এটি আমাদের বুযুর্গানে দ্বীনদের তরিকা।
এখানে কয়েকটি সুন্নত মুস্তাহাব আমলের কথা বলা হয়েছে,এগুলো ছাড়াও জুমার অসংখ্য ফযিলত এবং আমল রয়েছে।আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন আমাদেরকে আমলের তাওফিক দান করুন।আমিন।
জুমার নামায না পেলে করনীয়:
যে ব্যক্তির ওজর বশত জুমার নামায ছুটে যায়,সে ব্যক্তি সেই দিনের কাযা না হলে পুর্ন যোহরের নামায পড়বে।কাযা হলে শুধু ফরজ পড়বে। আর ইচ্ছাকৃত ত্যাগ করলে কাযার সাথে সাথে তওবা ও করতে হবে।কেননা এটি অনে বড় কবিরা গুনাহ।
আরো পড়ুনঃ
• ডেঙু,মেলিরিয়া,টায়পয়েড জ্বরের সর্তকতা ও দোয়া।
•আওয়াবিনের নামায কাকে বলে,কখন পড়তে হয় এবং ফযিলত বরকত।
•সায়্যেদুল ইস্তেগফার কখন পড়তে হয়,তাওবা করার সঠিক নিয়ম।
•দুরুদ শরিফের ফযিলত, বরকত এবং আমল।
•বদনজরের থেকে বাঁচার আমল ও দোয়া বাংলায়।
সাওয়ায়ের নিয়তে সকল মুসলমান দ্বীনি ভাই বোনদেরকে পোস্টটি শেয়ার করার অনুরোধ।
মানুষ আরো জানতে চায়:
নামাযের দোয়া ও নিয়ম কানুন।
নামাজের পদ্ধতি
সহিহ নামায পড়ার নিয়ম
নামাযের সহীহ নিয়ম
নামাজের দোয়া
দোয়া কুনুত
দোয়া মাসুরা
দরূদে ইবরাহিম
তাশাহুদ আত্তাহিয়াত আত্তাহিয়াতু
নামাজের সানা
রুকু থেকে সোজা হয়ে পড়ার দোয়া
দুই সিজদার মাঝখানের দোয়া
নামাজের প্র্যাক্টিকেল
শুদ্ধ ভাবে নামায শিখা
নামাজের ওয়াক্ত
নামাজ
নামাজের দোয়া
নামাজের সময়
নামাজ কে বলো না কাজ আছে lyrics
নামাজের নিষিদ্ধ সময়
নামাজের সময়সূচী
নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
নামাজ শিক্ষা
নামাজের ওয়াজিব ১৪ টি
নামাযের নিয়ম
নামাযের ফরজ
নামাযের আহকাম
নামাজের সময়সূচি ঢাকা ২০২৪
জুমার দিনের আমল
জুমার নামায পড়ার নিয়ম
জুমার খোতবা
জুমার দিনের সুন্নাহ
জুমার দিনের সুন্নত আমল
0 মন্তব্যসমূহ