গায়েবানা জানাযার ইসলামী হুকুম | গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে কিনা? গায়েবানা জানাযা শরীয়তের হুকুম।

gayebana janajar hukum

গায়েবানা জানাযার শরীয়তের হুকুমঃ(janajar dua)

ইসলাম একটি সুন্দর জীবন বিধান। যাতে সম্পূর্ণ দ্বীন ইসলানের ব্যাখ্যা রয়েছে।এর একটি বিষয় হলো গায়েবানা জানাযা। সারা দুনিয়ার মধ্য যত মুসলমান রয়েছেন, তাদের মধ্যে ৮০%  মুসলমান ইসলামি রীতিনীতি এবং ইসলামী সকল নিয়ম কানুন এর মাসালা মাসাইল অনুসরণ করেন ইমাম আযম আবু হানিফা নোমান বিন সাবিত(رَحْمَةُ اللّٰهِ عَلَيْهِ ) কে। যা বিশ্বের ইসলামের মুল মাযহাবের প্রধান ও অন্যতম। আর হানাফি মাযহাবে গায়েবানা জানাযা যায়েজ নেই। আর সারা দুনিয়ার সব চেয়ে বেশি যাকে জমহুর বলা হয় এবং জমহুর এটাই শরীয়তের হুকুম, গায়েবানা জানাযা যায়েজ নেই।

আরো পড়ুনঃ •রিজিক বৃদ্ধির দোয়া ও ধনি হওয়ার খাস আমল।

বদনজরের থেকে বাঁচার আমল ও দোয়া বাংলায়

হানাফি মাযহাবের মুল অন্যতম প্রধান কিতাবে এসেছে, 

''গায়েবানা জানাযার নামায হতে পারে না। জানাযার নামাযে  মৃত ব্যক্তি (লাশের শরীর) সামনে থাকাটা আবশ্যক। গায়েবানা (অর্থাৎ- লাশের অনুপস্থিতিতে) জানাযার নামায কখনোই হতে পারে না। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ১২৩, ১৩৪ পৃষ্ঠা) নিয়ম হচ্ছে, ইমাম সাহেব মৃত ব্যক্তির সীনা (বুক) বরাবর দাঁড়াবেন ।

সাহাবীগন গায়েবানা জানাযা পড়েছে?

(1) হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ) এর আমলে  মুসাইলামাতুল কাজ্জাব (ভন্ড নবী দাবীদার) বহু ক্বারী, কোরআনে হাফেজ,মুফতি সাহাবী,হাদিসের হাফেজ  সাহাবীদেরকে শহীদ করেছে। আরো অনেক সাহাবী যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হয়েছেন কিন্তু হযরত আবু বকর (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ) এবং অন্যান্য কোনো সাহাবীগণ কেউই গায়েবানা জানাযা আদায় করেননি।

(2) হযরত উমর (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ) এর আমলে বহু যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাজার হাজার সাহাবা জিহাদের ময়দানে মদীনা শরীফ থেকে বহু দূরে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু কোন একজনেরও গায়েবানা জানাযা হযরত উমর (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ) আমলে অনুষ্ঠিত হয়েছে এর কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।

আরো পড়ুনঃ শস কুফল বা বান জাদু টোনার ৬তালা দোয়া ও আমল।

৩৩ আয়াত কি? ৩৩আয়াতের আমল ও বরকত।বিপদ থেকে বাঁচার দূর্গ।

(3) হযরত উসমান (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ) ও হযরত আলী (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ) এর আমলেও গায়েবানা জানাযার নামাযের কোনো প্রমাণ নেই। অথচ হযরত উসমান (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ) ও হযরত আলী (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ) যামানাতেও হাজার হাজার সাহাবা ও তাবেয়ীগণ শহীদ হয়েছেন। কিন্তু কোন সাহাবী বা তাবেয়ীদের গায়েবানা জানাযার  এলান করেন নি এবং  নিজেরাও গায়েবানা জানাযার নামায আদায় করেন নি। এ ব্যপারে কোন  হাদীস শরীফ নেই।এমন কি ইতিহাসেও এর প্রমাণ নেই।

গায়েবানা জানাযা নাযায়েজঃ

যাদুল মায়াদ কিতাবে এসেছে, "মুসলমানদের

মাঝে অনেক এমন ব্যক্তি ইন্তেকাল করেছেন যারা রাসূল(ﷺ) থেকে দূরে তথা গায়েব ছিলেন। কিন্তু

নবীজী (ﷺ) কারোরই গায়েবানা জানাযা পড়েননি।

(তথ্যসূত্র: যাদুল মাআদ-খন্ড-১,পৃষ্ঠা -৫১৯;)

রাসুলে পাক (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ) সারাজীবনে শুধুমাত্র একদুবার এমন ভাবে জানাযা পড়েছেন । আর এতে কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা আল্লাহর রাসুল(ﷺ) কবরের ভিতরে কি হচ্ছে তাও দেখেন। আর সারা দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ওলামায়ে কিরামগন এটা মতামত দিয়েছে রসুল (ﷺ) যে  জানাযা পড়লেন যা অনেকে গায়েবানা জানাযা বলে, সেটা শুধুই নবীজির জন্য নির্দিষ্ট সেটা অন্য কারো বেলায় মানা যাবেনা।  আর এটি রসুল(ﷺ)এর মোজেযা ছিলো। তাই এটা অন্য কারো দ্বারা করার অনুমতি নেই।

আরো পড়ুনঃ 

আয়াতে কুতুবের ১২ অলৌকিক ফযিলত ও ক্ষমতা।

•আয়াতে মুনজিয়াত বা হিফাজতের শ্রেষ্ঠ ৭টি আয়াত।

নাজাশীর জানাযার হাদীসমূহ

হযরত ইমরান বিন হুসাইন (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ) বলেন- তথা আমরা (নাজ্জাশীর) জানাযার ব্যাপারে এটাই অনুধাবন করছিলাম

যে, তা আমাদের সামনে রাখা আছে। (তথ্যসূত্র: মুসনাদে আহমাদ,

হাদীস নং-২০০০৫)

হযরত ইমরান বিন হুসাইন (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ) বলেন-   “সাহাবায়ে কেরামের বিশ্বাস এটাই ছিল যে,

জানাযা (লাশ) হুযূর (ﷺ)এর সামনে উপস্থিত। (তথ্যসূত্র: সহীহ ইবনে হিব্বান,

হাদীস নং-৩১০২)

এছাড়া উক্ত বর্ণনাটি হযরত আবান (رَحْمَةُ اللّٰهِ عَلَيْهِ )  হযরত ইমরান ইবনে হাছীন (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ)থেকে বর্ননা করেন, যাতে বলা হয়েছে যে, “যখন নবীজী (ﷺ)এর পিছনে জানাযা পড়েছি, তখন নাজাশীর লাশকে আমাদের সামনে উপস্থিত দেখতে পেয়েছি।” (তথ্যসূত্র: উমদাতুল কারী শরহুল বুখারী- খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-৩৩;) (ফাতহুল বারী- খন্ড-৩,পৃষ্ঠা -২৪৩;)


আবু আওয়ানার বর্ণনাতে এসেছে,  আমরা দেখছিলাম যে, আমাদের সামনে নাজ্জাশীর জানাযা রাখা। সকল বর্ণনার দিকে তাকালে পরিস্কার হয়ে যাবে, নাজাশীর জানাযা বর্ণনাকারী সাহাবীগণ কেন উক্ত ঘটনা দ্বারা গায়েবানা জায়েজের দলীল মনে করেননি।নাজাশীর জানাযার বর্ণনা করলেও জীবনে কোনদিন নিজে গায়েবানা জানাযা পড়েননি। কারণ তারা পরিস্কার বুঝেছিলেন নাজাশীর জানাযার নামাযটি গায়েবানা জানাযা নয়। বরং উপস্থিত ব্যক্তির জানাযা। রাসূল (ﷺ) এর মুজেযা স্বরূপ নাজাশীকে নবীজী (ﷺ) এর সামনে উপস্থিত করে দেয়া হয়েছিল। আর সেই জানাযা সামনে নিয়ে নবীজী, (ﷺ) জানাযা পড়িয়েছেন।আর সামনে নিয়ে জানাযা পড়ার নাম উপস্থিত ব্যক্তির জানাযা গায়েবানা জানাযা নয়।আর সাহাবায়ে কিরাম এটি জানতেন বিধায় তারা কখনো গায়েবানা জানাযা পড়েন নি। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) জীবনে একবারই হাবশার বাদশা নাজাশীর মৃত্যুতে সাহাবীদের নিয়ে তার গায়েবানা জানাজার নামাজ আদায় করেছেন।  ( সহীহ বুখারী ১ম খন্ড ১১৮৮, ১২৫৪ ও ১২৬৩ নং হাদিস , সহীহ মুসলিম ১ম খন্ড ৯৫২ নং হাদিস) 

 মহাদ্দিসগন হাদিসটির বিশ্লেষণ করেছেন,

 এ ঘটনার পর রাসুলুল্লাহ(ﷺ), সাহাবীগন, তাবেয়ীগন, তাবে তাবেয়ীগন কোনদিন কোন

মুসলমানের গায়েবানা জানাজা পড়েন নি।

(তথ্যসূত্র: লামেউদ দুরারী খন্ড-৪,পৃষ্ঠা -৪৩২ , ফতহুল ক্বাদীর খন্ড-১,পৃষ্ঠা -৪৩২;) 

রাসুলে আকরাম (ﷺ) বাদশা নাজ্জাসীর জানাজা পড়ার বিষয়ে মুহাদ্দিস এবং ফকিহ আলেমগণ বলেন, বাদশা নাজ্জাসীর জানাজা পড়ার সময় রাসুলে আকরাম (ﷺ) এর সামনের সকল পর্দা সরিয়ে মৃতদেহকে তাঁর সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল।তাই তা রাসুলে আকরাম (ﷺ) এর জন্য গায়েব ছিলনা। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, সপ্তম খন্ড, পৃষ্টা ২২৬)।

এছাড়া আর কোন সময় রাসুল (ﷺ)গায়েবানা জানাজা পড়েননি।যারা গায়েবানা জানাজা জায়েজ বলেছেন, তারা যায়িজ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত দিয়েছেন, (১) যদি মৃতদেহের একবারো জানাজা না হয়। (২) মৃতদেহ যদি নষ্ট না হয়। যাদের জানাযা পড়া হয়েছে তাদের গায়েবানা জানাযা পড়া যাবেনা। এমনকি যে ব্যক্তির ১ম জানাযায় তার ওলী বা লাশের অভিভাবক জানাযা পড়ে ফেলবে, তার ২য় বার  জানাযা দেয়াও ইসলামে যায়েজ নাই।তাকে দ্রুত দাফন করতে হবে।

হানাফি মাযহাবে গায়েবানা জানাযার হুকুমঃ

মোট কথা, বাদশা নাজ্জাশীর পর আল্লাহর রাসূল(ﷺ)সাহাবী,তাবেয়ীগন আর কারো জানাযা পড়েন নি।আর বাদশা নাজ্জাশীর জানাযা নবিজির মোজেজা।তাই এটা অন্য কারো জন্য যায়েজ নেই। আর যেই কাজ আল্লাহর রাসুল  বহুবার করেছেন (লাশকে সামনে নিয়ে যানাজা) সেটাকে বাদ দিয়ে যেটা একবার করেছেন সেটা শরীয়তের দলিল হতে পারেনা।

আরো পড়ুনঃ 

আওয়াবিনের নামায কাকে বলে,কখন পড়তে হয় এবং ফযিলত বরকত।

জুমার দিনের আমল ও দোয়া।জুমার দিনের ২৬টি ফজিলত পুর্ন সুন্নত আমল।

নামাযের সকল ওয়াজিব। নামাযের নিয়ম কানুন।

•পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সব দোয়া বাংলায়। 

আইয়্যামে বিজ অর্থ কি? এর রোজার ফযিলত কি? কখন রাখতে হয়।

•দোয়ায়ে কুনুত শিখুন। দোয়ায়ে কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ।

•দোয়ায়ে মাসুরা শিখুন। দোয়ায়ে মাসুরা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ।

পোস্ট টি শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ