দান সদকার ফজিলত গুরুত্ব উপকারিতা | দান সদকা সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিস।

দান সাদকার ফজিলত

 

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আমাদেরকে অনেক অনুগ্রহ করে দ্বীন ইসলাম সকল বিধান দিয়েছেন।এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দান সদকা। এটি ইসলামের মহানুভবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দান সদকার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ ও রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জন করেন।ইসলামের ইতিহাসের সোনালী দিনগুলোর এমন হাজারো সোনালী ঘটনা রয়েছে।


দান সদকার ফজিলতঃ

  মানবতার অগ্রদূত, মানবতার মহান আলোকবর্তিকা, মানবতার পথ প্রদর্শক প্রিয়নবী (ﷺ) এর দান সদকা সম্পর্কে অমূল্য বানী;

প্রিয়নবী(ﷺ) ইরশাদ করেছেন,

1. সদকা কবরের আযাব  থেকে বাঁচায়। (শুয়াবুল ঈমান, ইমাম বায়হাকী; খন্ড-৩; পৃষ্ঠা-২১২; হাদিস নং-৩৩৪৭;)

2. নিশ্চয় মুসলমানের সদকা তার হায়াতকে বৃদ্ধি করে।

 (মু'জামুল কাবির, ১৭/২২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩১;)

3. সকল-সন্ধ্যা সদকা করো কেননা বিপদ সদকার আগে অগ্রসর হয়না। (মু'জামে কবির, ৪/১৮০ পৃষ্ঠা, হাদীস ৫৬৪৩) 

4. হাকীমুল উম্মত মূফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী (رَحْمَةُ اللّٰهِ عَلَيْهِ) হাদীসে পাকের ব্যাখ্যায় বলেন, দান-সদকার কারণে দুনিয়াবী বিপদাপদ আসেনা। আসলেও তার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়ে যায়, দানশীল ব্যক্তি মন্দ মৃত্যু বা মৃত্যুর সময় সকল অমঙ্গল বিপদ থেকে নিরাপদ থাকে। (মিরাতুল মানাজিহ, শরহে মিসকাতুল মাসাবিহ, ৩য় খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা)

5. হযরত সায়্যিদুনা হুযাইফা (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُ) বলেন, দ্বীনের ক্ষেত্রে গুনাহগার এবং জীবনে সহায়হীন ও দুরাবস্থা সম্পন্ন অনেক লোক শুধু নিজের দানশীলতা/দান সদকার কারণেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ইহইয়াউল উলুম;ইমাম গাজ্জালী, খন্ড-৩ /পৃষ্ঠা- ৭৪০ )

6. সদকা অমঙ্গলের,অকল্যাণের ৭০টি দরজাকে বন্ধ করে দেয়।

(আল মু'জামুল কবীর, ৪/২৭৪, হাদীস নং ৪৪০2 )

7. প্রত্যেক ব্যক্তি কিয়ামতের দিন নিজের দান সদকার ছায়ায় থাকবে, এমনকি মানুষের মাঝে ফয়সালা করে দেয়া হবে।

(আল মু'জামুল কবীর, ১৭/২৮০, হাদীস নং ৭৭১)

8. নিশ্চয় সদকা প্রদানকারীকে সদকা কবরের গরম থেকে রক্ষা করবে এবং নিঃসন্দেহে মুসলমান কিয়ামতের দিন নিজ সদকার ছায়ায় থাকবে।

(শুয়াবুল ঈমান,ইমাম বায়হাকী; বাবুয যাকাত, ৩/২১২, হাদীস নং ৩৩৪৭)

9. নামাজ হলো ঈমানের দলীল এবং রোজা হলো গুনাহের ঢাল স্বরূপ আর সদকা গুনাহকে এভাবে মিটিয়ে দেয়, যেমনিভাবে পানি আগুনকে মিটিয়ে দেয়। (জামে তিরমিজী, আবওয়াবুস সফর, বাবু মা যিকরে ফি ফদলুস সালাম, ২/১১৮, হাদীস নং ৬১৪)

10.  ভোরে সদকা করো, কেননা বিপদাপদ সদকার আগে যেতে পারে না ।

(শুয়াবুল ঈমান, বাবু ফিষ যাকাত, ৩/২১৪, হাদীস নং ৩৩৫৩)

11. নিশ্চয় মুসলমানের সদকা হায়াত বৃদ্ধি করে এবং মন্দ মৃত্যুকে প্রতিরোধ করে আর আল্লাহ তা'য়ালা এর বরকতে সদকা প্রদানকারী থেকে অহঙ্কর ও গর্ব (মন্দ স্বভাব) দূর করে দেয়। (আল মু'জামুল কবীর, ১৭/২২, হাদীস নং ৩১) 

12. যে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য সদকা প্রদান করে, তবে তা (সদকা) তার এবং আগুনের মধ্যখানে পর্দা হয়ে যায়। (মু'জামুয যাওয়ায়িদ, কিতাবুয যাকাত, বাবু ফদলুস সদকাতি, ৩/২৮৬, হাদীস নং ৪৬১৭)

13. নিশ্চয় সদকা আল্লাহ তায়লার গযব থেকে বাঁচায় এবং মন্দ বা খারাপ মৃত্যুকে প্রতিরোধ করে ।

(তিরমিযী, কিতাবুয যাকাত, বাবু মা'জা ফি ফদলুস সদকাত, ২/১৪৬, হাদীস নং ৬৬৪)

 14. যখন মানুষ সদকা করে, তখন শয়তান বাধা দেয়, নফস বাধা দেয়, এমনকি ৭০টি (সত্তর) শয়তান বাধা দেয়। হাদীস শরীফে এসেছে, যখন মানুষ সদকা করে, তখন ৭০টি শয়তানের মুখের চোয়াল ছিড়ে মানুষ সদকা বের করে।

(মুজমাউয়ুজ যাওয়ায়িদ, কিতাবুয যাকাত, বাব ইরগামুশ শয়তান বিস সাদকা, ৩/২৮৪, হাদীস ৪৬০১ )

দান সদকার উপকারিতাঃ

দান সদকার উপকারিতা বেশুমার। 

১) দান সদকার মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসুল খুশি হন।

২)দান করার মাধ্যমে নিজের আখিরাতের জন্য উত্তম নেকির সঞ্চয় হয়।

৩)দান সদকার মাধ্যমে গরিব দুঃখীদের অভাব ও দুঃক্ষ মোচন হয়।

৪)অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর মতো মহান মানবতার উদ্দেশ্য সাধিত হয়।

৫)দান সদকার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত অর্জন হয়।এর দ্বারা বিপদ আপন,রোগ বিমারী থেকে নাযাত হাসিল হয়।

দান সদকা সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিসঃ 

দান সদকা সম্পর্কে কোরআনের আয়াতঃ

১) আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন, যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে তাদের এই  ব্যয়কে এমন একটি শস্য দানার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যা জমিনে রোপণ করার পর তা থেকে সাতটি চারা জন্মে এবং প্রতিটি চারায় একশতটি করে শস্যদানা থাকে। এভাবে আল্লাহ যাকে চান বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ সবচেয়ে বড় ও মহাজ্ঞানী। (সুরা বাকারা, আয়াত নং-২৬১;)

২) পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ রব্বুল আলামীন   বলেন, যদি তোমরা দান-সদকা প্রকাশ্যে করো  তবে তা উত্তম, আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবীদেরকে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য ভালো। এর মাধ্যমে আল্লাহ  তোমাদের গুনাহকে মুছে দিবেন। তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ তা সম্পর্কে অবগত আছেন। (সূরা- বাকারা, আয়াত নং- ২৭১;)

৩)আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেব, আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করো তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগেই। আর নাহয় অনুশোচনা করে বলতে হবে, হে আল্লাহ আমাকে যদি অল্প কিছু সময় দিতে, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম এবং নেক লোকদের একজন হতাম। কারও মৃত্যুর নির্ধারিত সময় আসার পর আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। আল্লাহ তোমাদের সকল কর্মের  ব্যাপারে ভালভাবে জানেন। (সূরা- মুনাফিকুন, আয়াত নং: ১০-১১;)

দান সদকা সম্পর্কে হাদিসঃ

১) প্রিয়নবী (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ন থাকত,আর এটা  আমার পছন্দ নয় যে, তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তার কিছু অংশ আমার কাছে থাকুক। তবে এতটুকু পরিমাণ ছাড়া, যা আমি ঋণ পরিশোধ করার জন্য রাখা হয়ম। (তথ্যসূত্র: সহীহ বুখারি শরিফ; হাদিস নং- ২৩৮৯;)

২) রুবাইয়্যা বিনতে মুয়াব্বিজ ইবনে আফরা (رَضِيَ اللّٰهًُ عَنْهُا) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার একপাত্র খেজুর এবং কিছু সামান্য শসা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)'র খেদমতে উপস্থিত হলাম। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে এক মুষ্ঠি অলংকার ও স্বর্ণ দান করেন। (শামায়েলে তিরমিজি,ইমান তিরমিজি ; হাদিস নং- ২৭৩)

দান সদকার গুরুত্ব ও ফজিলতঃ 

দান সদকা মানবতার উপকারের জন্যই আল্লাহ ও রাসুল (ﷺ) হুকুম করেছেন, বর্তমানে পৃথিবীতে এখনো অনেক লোক রাতে না খেয়ে থাকতে হয়। কঠিন থেকে কঠিনতম কষ্টকর কাজ করেও পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে হিমশিম খেতে হয়।আর মানবতার ফেরিওয়ালা যাদেরকে সেলুট করতে হয়, যারা ঐ সব মানুষের মুখে হাসি পোটানোর জন্য নিজেদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।আমাদেরকে হাদিসে এবং কোরআনে পাকে প্রতি জুমার খোতবায় প্রতিবেশীদের কথা বলা হয়,তাদের খোজ খবর রাখা।হাদিসে বলা হয়েছে, আপনার ঘরে ভালো তরকারি রান্না হলে,একটু তরকারি ঝোল বাড়িয়ে আপনার প্রতিবেশির ঘরে পৌছান। এই হাদিস শরীফের সঠিক মর্ম অনুধাবন করলে, সমাজে শুধু মায়া-মমতা আর মহানুভবতায় ভরে যাবে।একটি হাদিসে প্রিয়নবী(ﷺ) বলেছেন,

 خَيْرُ النَّاسِ مَنْ يَّنْفَعُ النَّاسِ

উত্তম মানুষ সেই,যে মানুষের উপকার করে।

দান সদকার করার নিয়মঃ

দান সদকার ব্যপারে আল কোরআনে সুরা বাকারায় এসেছে ভালো কথার সাথে দান সদকার জন্য। কাউকে খোট দিয়ে নয়, ধমক দিয়ে নয়, তিরস্কার বা ছোট করে দান সদকা আল্লাহ পাক কবুল করেন না। এটাও খেয়াল রাখতে হবে দান সদকা যেনো আল্লাহ এবং রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য হয়,মানুষকে দেখানোর জন্য যেনো না হয়।কেননা লোক দেখানো হলো রিয়া বা ছোট শিরক যা আল্লাহ কখনোই কবুল করেন না। আল্লাহ পাক ইখলাসের দান সদকা কবুল করেন।

 দান সদকা কখনো গোপনে উত্তম আবার কখনো প্রকাশ্যে করা উত্তম।গরিব দুঃখী, অসহায়কে সদকা গোপনেই উত্তম।উত্তম হলো দান সদকা গোপনে করা। আর দ্বীনি কাজের জন্য দান সদকা প্রকাশ্যে করা উত্তম, এতে অপরের মাঝে উৎসাহ বৃদ্ধি পায়।

রিজিক বৃদ্ধির দোয়া ও ধনি হওয়ার খাস আমল।

বদনজরের থেকে বাঁচার আমল ও দোয়া বাংলায়

শস কুফল বা বান জাদু টোনার ৬তালা দোয়া ও আমল।

৩৩ আয়াত কি? ৩৩আয়াতের আমল ও বরকত।বিপদ থেকে বাঁচার দূর্গ।

আয়াতে কুতুবের ১২ অলৌকিক ফযিলত ও ক্ষমতা।

•আয়াতে মুনজিয়াত বা হিফাজতের শ্রেষ্ঠ ৭টি আয়াত।

• ডেঙু, মেলিরিয়া, টায়পয়েড জ্বরের সর্তকতা ও দোয়া।

ঘরের সবাইকে ডেঙ্গু ভাইরাস থেকে নিরাপদের দোয়া।

খিজির আলাইহিস সালাম এর দোয়া বা মুসাব্বাতে আশারা।

মনের আশা পূরনের পরীক্ষিত আমল ও দোয়া বাংলায়।

দোয়া কাবুল আমল বা দোয়া কবুল হওয়ার দোয়া।

• নাদে আলী দোয়া - নাদে আলী শরীফের আশ্চর্য ফযিলত ও বরকত বাংলায়।

• দুশ্চিন্তা পেরেশানি বিপদাপদ থেকে মুক্তির দোয়া।

নতুন ঘরে প্রবেশের নিয়ম দোয়া। ঘরে প্রবেশ এবং ঘর থেকে বের হবার দোয়া

গলার মাছের কাঁটা নামানোর দোয়া ও আমল। গলার কাঁটা নামানোর ঔষধ। 

জীবনে উন্নতি করার দোয়া। জীবনে সুখী হবার দোয়া।

•আয়াতে হিযব বা শত্রুর উপর বিজয় লাভের আমল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ