মহিলাদের শুক্রবারের আমল ও ইবাদতঃ

আসর থেকে মাগরিব অধিক দোয়া করাঃ

শুক্রবার দোয়া কবুল হয়:

নবী করীম, রাহমাতুল্লিল আলামীন (صلى الله عليه و سلم) ইরশাদ করেন: “জুমার দিন এমন একটা মূহুর্ত রয়েছে, যদি কোন মুসলমান সেটা পেয়ে আল্লাহ্ তাআলার নিকট কোন কিছু চায় তবে অবশ্যই আল্লাহ্ তাআলা তা দান করবেন। তবে ঐ মূহুর্তটা খুবই সংক্ষিপ্ত।”

(সহীহ মুসলিম, ৪২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৮৫২ )

জুমার দিন দোয়া কবুল হয়:

রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه و سلم)ইরশাদ করেন: “জুমার দিনের দোয়া কবুলের সময়টা আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে অনুসন্ধান করো।” (সুনানে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৮৯)

জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার সময় কোনটি?

মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله عليه) বলেন:জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার সময়ের ব্যাপারে উলামায়ের কিরামগণের ৪০টি অভিমত রয়েছে। তন্মধ্যে ২টি অভিমত সব চাইতে মজবুত। এদের একটি হলো দুই খোৎবার মধ্যবর্তী সময় আর অপরটি হলো সূর্যাস্তের সময়(আসর থেকে মাগরিব) । (মীরআত, ২য় খন্ড, ৩১৯-৩২০ পৃষ্ঠা)

আরো পড়ুনঃ •গর্ভবতী মায়েদের জন্য দুয়া ও আমল।

•নিঃসন্তান বা সন্তানহীন এর সন্তান লাভের দোয়া ও আমল।

মহিলাদের জুমার দিনের আমাল ও দোয়াঃ

শুক্রবার মহিলাদের ইবাদত এবং দোয়া কবুলের আমলঃ

মহিলাদের জুমার দিন বা শুক্রবার অধিক পরিমান 'ইয়া আল্লাহু' 'ইয় রহমানু' 'ইয়া রহীমু' পড়া।আসর থেকে মাগরিব তসবিহ হাতে নিয়ে পড়া। যেই কোনো কঠিন মনের আশা হোক।৫শুক্রবার এই আমল করলে কবুল হবে। ان شاء الله

মহিলাদের শুক্রবার নখকাটা, পাক-সাফ হওয়া এটি সুন্নাতঃ

জুমার দিন নখ কাটলে রোগ বিমারী থেকে শিফা (আরোগ্য) লাভ করবে:

হযরত হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান (رحمة الله عليه), তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন তার নখ কাটে, আল্লাহ্ তাআলা তার শরীর থেকে অসুস্থতা দূর করে সুস্থতা দান করেন।”(মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বা, ২য় খন্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)

শুক্রবার নখ কাটলে ১০ দিন পর্যন্ত বালা-মুসীবত থেকে রক্ষা পাবে:

সদরুশ শরীয়া আল্লামা মাওলানা আমজাদ আলী আযমী(رحمة الله عليه)বলেন; হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটবে আল্লাহ্ তাআলা তাকে দ্বিতীয় জুমা ও পরবর্তী আরো তিনদিন সহ সর্বমোট দশ দিন পর্যন্ত যাবতীয় বালা মুসীবত থেকে রক্ষা করবেন।”

অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে; যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটবে, তাঁর নিকট রহমতের আগমন ঘটবে এবং তার গুনাহ দূর ক্ষমা হবে।

(তথ্যসূত্র: বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ২২৬ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৯ম খন্ড, ৬৬৮-৬৬৯ পৃষ্ঠা)

প্রত্যেক জুমার দিন ১ কোটি ৪৪ লক্ষ জাহান্নামীদের মুক্তি:

অধিক পরিমাণ যিকির তাসবিহ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা, বেশি বেশি দরূদ শরিফ পড়া, এবং বেশি থেকে বেশি ইস্তেগফার পড়ার চেষ্টা করা। কেননা এই আমল গুলোতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

রাসুলে পাক (صلى الله عليه و سلم) ইরশাদ করেন: “জুমার দিনের রাত- দিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে এমন কোন ঘন্টা নেই, যার মধ্যে প্রতিনিয়ত ৬ লক্ষ দোযখীকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না, যাদের উপর জাহান্নাম ওয়াজীব হয়ে গেছে।” (মুসনাদে আবু ইয়ালা, ৩য় খন্ড, ২৯১, ২৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৪২১, ৩৪৭১)সারা দিনে ১ কোটি ৪৪ লক্ষ জাহান্নামীদের মুক্তি।

আরো পড়ুনঃ •গর্ভবতী নারীদের কোন মাসে কোন সুরা এবং দোয়া পড়তে হয়।

•মৃত মহিলাদের গোসল দেয়া, কাফন পরানো এবং দাফনের নিয়ম।

জুমার দিনে মারাগেলে কবরের আযাব মাফ:

রাসুলে পাক(صلى الله عليه و سلم) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন কিংবা জুমার রাতে(বৃহস্পতিবার দিন শেষে রাত) মৃত্যুবরণ করবে, সে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাবে এবং কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তার উপর শহীদদের মোহর থাকবে।” (হিলআতুল আউলিয়া, ৩য় খন্ড, ১৮১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৬২৯)

রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه و سلم) ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে তার গুনাহ ও ভুল বা গুনাহ সমূহ মুছে দেয়া হয় (আল মুজামুল কবীর, ১৮তম খন্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৯২)

জুমার দিন যে আমলে জান্নাত ওয়াজীব হয়ে যাবে:

রাসুলে পাক (صلى الله عليه و سلم) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন রোযা রাখে, কোন অসুস্থ ব্যক্তির সমবেদনা জ্ঞাপন করে, কারো বিয়েতে অংশগ্রহণ করে, তবে ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজীব হয়ে গেলো ।” (আল মুজামুল কবীর, ৮ম খন্ড, ৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৭৪৮৪)

আরো পড়ুনঃ •দুরুদ শরিফের ফযিলত, বরকত এবং আমল।

•দরূদে ইবরাহীম বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফযিলত।

নারীদের শুক্রবারের করনীয় আমল ও ইবাদতঃ

(1) নখ কাটা।

(2) পাক সাফ হওয়া।

(3) মিসওয়াক করা।

(4) গোসল করা।

(5) শুক্রবার জুমার দিন মহিলাদের উত্তর পোষাক পরা।

মহিলাদের আমল ও দোয়া ইবাদতঃ

(6) চুলে সেম্পু ও তেল ব্যবহার করা,চুল আচড়ানো এবং অধিক সুগন্ধি নয় এমন তেল সুগন্ধি লাগানো যেতে পারে।খেয়াল রাখতে হবে, পর পুরুষ যার সাথে পর্দা করতে হয় এমন ব্যক্তি মহিলার গায়ের সুগন্ধির ঘ্রাণ না পায়।না হয় কিয়ামতের দিন যিনাকারীদের কাতারে উঠানো হবে।

(7) জুমার প্রথম আযানের সাথে সাথেই কাজ-কর্ম থেকে পারিগ হয়ে ইবাদতের, তিলাওয়াতের, নামাযের, তাসবিহের দিকে বসে যাওয়া।

(8) অধিক পরিমাণ দুরুদ শরিফ পড়া।কমপক্ষে ২০০বার এতে ২০০বছরের গুনাহ মাফ হবে।

(9) সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করা।এতে ৩হাজার হরফ আছে, ৩হাজার গুনাহ ক্ষমা হবে।(ইত্তেহাফুস সাদাত,১৪তম খন্ড,২৭২ পৃষ্ঠা)

(10) মা বাবা ময়-মুরুব্বিদের কবর জিয়ারতের নিয়তে তাদের জন্য দুয়া করা।

(11) জুমার দিন আসর থেকে মাগরীব দোয়া করা।

(12) জুমার দিন দান সদকা করা।এতে ৭০গুন সাওয়াব রয়েছে।

(13) অধিক পরিমান জিকির করা।ইস্তেগফার করে। ৩বার ইস্তেগফারের ফযিলত ৫০ বছরের গুনাহ মাফ।

আরো পড়ুনঃ •সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার কখন পড়তে হয়,তাওবা করার সঠিক নিয়ম।

•দরুদে তাজের ফযিলত ও বরকত।

•স্বপ্নে রাসুল(ﷺ)কে দেখার পরীক্ষিত আমল।

(14) সকল উম্মতে মুহাম্মাদির গুনাহ ক্ষমার দুয়া করা, এতে সকল উম্মতের সংখ্যা সমান সাওয়াব পাওয়া যাবে।

(15) আত্মীয় সজনের বাড়িতে যাওয়া বা খোজ খবর নেয়া।

(16) নিকটতম আত্মীয় রুগীদের দেখতে যাওয়া।

(17) নিজ ঘরের লোকদের জন্য ও প্রতিবেশির জন্য কিছু ভালো খাবার ব্যবস্থা করা।

(18) বৃহস্পতিবার সাথে জুমার দিন অথবা সাথে শনিবার মিলেয়ে রোজা রাখলে ১০হাজার বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যায়।(ফতোয়ায়ে রজবিয়া, খন্ড-১০,পৃষ্ঠা -৬৫৩;)

(19) শুক্রবার বা জুমার দিন সুরা হা-মীম দুখান তিলাওয়াত করা। শুক্রবার বা জুমার দিন সুরা হা-মীম তিলাওয়াত করলে জান্নাতে আলিশান মহল দেয়া হবে এবং তাকে ক্ষমা করা হবে।

(20) সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা।এতে আসমান পর্যন্ত নুর পাবে এবং গুনাহ ক্ষমা হবে।

(21) নারীদের জন্য মসজিদে যাওয়া ব্যতিত ঘরে যা আমল করা যায় সেগুলো করা অতি উত্তম সাওয়াবের কাজ।

আরো পড়ুনঃ •দরূদে শিফা সর্বরোগ মুক্তির দরূদ।

•সবচেয়ে ছোট দরূদ শরিফ - ফযিলত অনেক বেশি।

•শ্রেষ্ঠ ফযিলতের ৭টি ছোট দরূদ শরিফ বাংলা।

(22) পুরুষের জামাত শেষ হলে মহিলারা নামায পড়বে(অর্থাৎ একটু দেরী করে)।এটি আমাদের বুযুর্গানে দ্বীনদের তরিকা।

(23) জুমার আযানের জওয়াব দেয়া সহ সকল আযানের জওয়াব দেয়া।মহিলাদের আযানের জবাবে প্রতি এক ব্যক্যের বিনিময়ে ১লক্ষ নেকি দান করা হয়। (তারিখে দামেশক, আল্লামা ইবনে আসাকির, খন্ড-৫৫, পৃষ্ঠা -৭৫;)

(24) জুমার দিন 'সুরা কদর' জুমার নামাযের আগেই ৭বার পড়ে নেয়া এতে সারা দুনিয়ায় যত মানুষ জুমার নামায পড়বে।তাদের সমান নেকি দেয়া হবে।

জুমার দিনে করণীয় আমল ও ইবাদতঃ

(25) সুরা ফাতিহা, সুরা কাফিরুন, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস। ৭বার করে পড়া। এটি জুমার দিন ফজরের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় পড়া যাবে। এতে আগামী জুমা বা শুক্রবার পর্যন্ত সকল বিপদাপদ থেকে নিরাপদ হয়ে যাবে।

আরো পড়ুনঃ •খতমে খাজেগান এর নিয়ম, ফযিলত, দোয়া বাংলায়।

•খতমে আম্বিয়া খতমে তাহলীল পড়ার নিয়ম ও ফযিলত

খতমে ইউনুস পড়ার নিয়ম। খতমে ইউনুস পড়ার ফযিলত।

এখানে মহিলাদের জন্য সুন্নত আমল ও মুস্তাহাব আমলের কথা বলা হয়েছে। এগুলো ছাড়াও জুমার অসংখ্য ফযিলত এবং আমল রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন আমাদের মা-বোনেদের আমলের তাওফিক দান করুন।আমিন।

সাওয়ায়ের নিয়তে সকল মুসলমান দ্বীনি বোনদেরকে পোস্টটি শেয়ার করার অনুরোধ।

নিয়মিত পোস্ট পেতে আমাদেরকে ফলো করুন।

নিচের শেয়ার অপশনে শেয়ার করুন।

রিজিক বৃদ্ধির দোয়া ও ধনি হওয়ার খাস আমল।

•বদনজরের থেকে বাঁচার আমল ও দোয়া বাংলায়

•শস কুফল বা বান জাদু টোনার ৬তালা দোয়া ও আমল।

•৩৩ আয়াত কি? ৩৩আয়াতের আমল ও বরকত।বিপদ থেকে বাঁচার দূর্গ।

•আয়াতে কুতুবের ১২ অলৌকিক ফযিলত ও ক্ষমতা।

•আয়াতে মুনজিয়াত বা হিফাজতের শ্রেষ্ঠ ৭টি আয়াত।

• ডেঙু, মেলিরিয়া, টায়পয়েড জ্বরের সর্তকতা ও দোয়া।

•ঘরের সবাইকে ডেঙ্গু ভাইরাস থেকে নিরাপদের দোয়া।

•খিজির আলাইহিস সালাম এর দোয়া বা মুসাব্বাতে আশারা।